মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৮:১৩ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
রোহিঙ্গাদের কারণে বনভ‚মি ধ্বংস ও মনুষ্যত্বের নানা অত্যাচারের কক্সবাজারে বন্যহাতির মৃত্যুর পাশাপাশি আবাসস্থল হারিয়ে বনাঞ্চল থেকে হ্রাস পেতে শুরু করে এশিয়ান হাতি। কিন্তু, এখন দিন বদলেছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন-বিভাগের আওতায় টেকনাফ পাহাড়ের গহীনে একটি বন্যহাতি বাচ্চা প্রসবের সংবাদ দিয়েছে বনবিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিন বনবিভাগ জানিয়েছেন, সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরের দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হোয়াইক্যং বিটের মংলা জাইন চাকমার ঘোনা এলাকার বনের অভ্যন্তরে একটি বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। এনিয়ে গত এক বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগে বন্যহাতির বাচ্চার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬টিতে।
টেকনাফ হোয়াইক্যং রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষন তারেক রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘বনের ভেতর একটি বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করেছে দেখতে পেয়ে ডিউটিরত সিপিজি’র সদস্যরা বনবিভাগকে অবগত করে। খবর পেয়ে হোয়াইক্যং একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।’
সহকারী বন সংরক্ষক তারেক আরও জানান, ‘সবকিছু প্রাকৃতিকভাবেই ঘটছে এবং মা হাতিসহ বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। সিপিজি সদস্যদেরকে মা ও বাচ্চা হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ডিউটিতে রাখা হয়েছে।’
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু কক্সবাজার ভয়েসকে জানান , ‘২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১০ হাজার একর বনভ‚মি ধংস করে আশ্রয় নিয়েছে ১১লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা। এ কারণে, উক্ত বনাঞ্চলে হাতি গুলোর পরিবেশ, আবাসস্থল ধংসের কারণে বন্যহাতি গুলোর জীবন সংকটে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় তাদের চলাচলের করিডোর। এরমধ্যে বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করার খবর অত্যন্ত সুখকর। এই অবস্থায় হাতিদের যে আবাস্থল রয়েছে তা নিরাপদ রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানাভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: শেখ নাজমুল হুদা কক্সবাজার ভয়েসকে জানান জানান, ‘হাতির আবাস্থলের এসব এলাকায় আগের পরিবেশ ফিরে এসেছ। এখনো হাতির নিরাপদ আবাসস্থল জোন হিসাবে রয়েছে এসব বনাঞ্চল। খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ এবং সহনীয় পরিবেশ রয়েছে বলে এখনো হাতিরা এসব এলাকায় নির্বিঘেœ বিচরণ করছে এবং হাতি বাচ্চা প্রসব করছে। এসব বন্যহাতিদের কোনভাবে বিরক্ত করা যাবে না। যদি মানুষের কারণে অবাধ চলাফেরা করতে না পারে, তাহলে হাতিগুলো অন্যত্রে চলে যেতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বনবিভাগকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। ’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুর কবির কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে গত ১ বছরে এক বছর বয়সী প্রায় ১৬ টি বাচ্চা দেখা গেছে। হিমছড়ি, ধোয়াপালং, পানেরছড়া, ইনানী, হোয়াইক্যং, শীলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলে এসব বাচ্চা প্রসব করে মা হাতি। এসব হাতি গুলো এশিয়ান প্রজাতির হাতি।
মো: হুমায়ুর কবির জানান, সর্বশেষ ২ আগষ্ট কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হোয়াইক্যং বিটের মংলা জাইন চাকমার ঘোনা এলাকার বনের অভ্যন্তরে একটি হাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। মা এবং বাচ্চা হাতিটি সুুুস্থ আছে। মা ও হাতির চলাচল নির্বিগ্ন রাখতে হোয়াইক্যং রেঞ্জ সিপিজি সদস্যদের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ২০১৭ সালের সর্বশেষ জরিপে কক্সবাজারের এই দক্ষিণ বনাঞ্চলে মোট এশিয়ান হাতির সংখ্যা ছিল ৬৩টি। এসব হাতি থেকে প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে ২৬৮টি মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির দুই-তৃতীয়াংশের বাস কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কিন্তু, কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে রেললাইন, বিভিন্ন প্রকল্প, অবৈধ দখলসহ বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাতির আবাসস্থল উজাড়, চলাচলের করিডোরে চরমভাবে বাধাগ্রস্থ ও খাদ্য সংকটে পড়েছিল এসব হাতি। ফলে বাধ্য হয়েই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দেওয়ায় বন্যহাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ফসল রক্ষায় এসব হাতিকে বিদ্যুৎ শক দিয়ে ও গুলি করে হত্যা করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত তিন বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ ও উত্তর বনাঞ্চলে ১৮টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়। কিন্তু, বছর পাল্টে ১৬টি বাচ্চা হাতির প্রসবের সুখবর দিল স্থানীয় বনবিভাগ।
ভয়েস/আআ